রমজান শুরু দরপতনে: সুরক্ষা দিতে পারে আইনের সঠিক প্রয়োগ

পুঁজিবাজার রিপোর্ট: সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে গত সপ্তাহের শেষ থেকে পুঁজিবাজারে বড় উল্লম্ফন দেখা দিলেও তা টেকসই হয়নি। বরং পুঁজিবাজারে বড় দরপতন দিয়েই শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে শেষ কয়েক কার্যদিবসে যে গতিতে সূচকের উত্থান হয়েছে, গতকাল ও আজ সেভাবেই পতন হয়েছে। রমজানে মাসের প্রথমদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার আসলে স্বাভাবিক অবস্থানে নেই। গত এক বছরে সূচক কমেছে এক হাজার পয়েন্টের বেশী। আবার টার্নওভারও তলানিতে ঠেকেছে। এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শেষ দুদিন বাজার বেড়েছিল। কিন্তু তার রেস কাটতে না কাটতেই ফের পতন হওয়ার কোনো যুক্তি নেই। মূলত বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও কারসাজির মাধ্যমে এটি করা হয়। যদিও এ ধরনের অনিয়ম ও কারসাজিকারীদের ধরা হলেও তেমন কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না। এতে তারা আরও বেশি সুযোগ পায়। আবার বাজার-সংক্রান্ত অনেক আইন রয়েছে। আইন কখনও সুরক্ষা দিতে পারে না। সুরক্ষা দিতে পারে আইনের সঠিক প্রয়োগ। অর্থাৎ যে আইন রয়েছে, সেটির সঠিক বাস্তবায়ন হলে বাজারে এ অবস্থা হতো না। নতুন নতুন আইন তৈরি করে বিনিয়োগকারীদের মগজ ধোলাই করা যায়। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত আগের আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হবে না ততদিন বাজারের সঠিক আগ্রগতিও খুব একটা এগোবে না বলেও মনে করেছেন তারা।
তারা আরও বলছেন, আমাদের পুঁজিবাজার ইকুইটি-নির্ভর, অন্যদিকে এর গভীরতা কম। গভীরতা বলতে শুধু কোম্পানি আনা বা অতিরিক্ত কোম্পানি থাকা নয়। এখানে গভীরতা বলতে বাজারে যে কোনো কোম্পানির যে কোনো শেয়ারদরের ক্ষেত্রে উভয় পাশে অর্থাৎ ক্রেতা ও বিক্রেতার ঘরে পর্যাপ্ত বিনিয়োগকারী থাকতে হবে। আর এখানে লেনদেন তখনই বাড়বে যখন বাজারে বিনিয়োগযোগ্য অবস্থা তৈরি হবে। বাজারের গভীরতা কেন বাড়ছে না সেটি গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। সত্যিকারভাবে বাজার ভালো করতে চাইলে সঠিকভাবেই এগোতে হবে। অর্থাৎ গত ৪০ বছরে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন অনেক এগিয়েছে। এখন অর্থনীতির গ্রোথ আট দশমিক ১৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে অর্থনীতির আকার অনুযায়ী বাজার আরও ভালো হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে বাজার টানা ১৪ সপ্তাহ ধরে পড়ছে। ২০১০ সালে বাজারধসেও এরকম অবস্থা তৈরি হয়নি। আবার অন্য দেশে করপোরেট বন্ড বাজারে ট্রেডিং হয়। কিন্তু এ বাজারে করপোরেট বন্ডের কোনো ট্রেডিং হয় না। বাজার ভালো করতে মূলত এসব বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে শেষ হয় লেনদেন। এদিন শুরুতে উত্থান থাকলেও কিছুক্ষণ পর সৃষ্ট বিক্রয় চাপে টানা নামতে থাকে সূচক। মঙ্গলবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৫২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫২৮৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১২২২ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৮৬১ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৪৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৭টির, কমেছে ২৬২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৪৩৩ কোটি ৫০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।
এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৫২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৫৩৪২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১২৩৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৮৮১ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৪৬৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৩৩ কোটি ৮৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।
অন্যদিকে দিন শেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক সিএসইএক্স ৯৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৮২৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২২৬টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪৭টির, কমেছে ১৬১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি ৪৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজার ওঠানামার বাজার। এ বাজারে শেয়ার দর ওঠানামা থাকবে। এখানে বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বড় কৌশলী ও ধৈর্যশীল হতে হবে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। ভালো শেয়ারের দর কমলে কিনতে হবে। কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। বিষয়টি কঠিন হলেও সঠিকভাবে তহবিল ব্যবস্থাপনা করতে পারলে এবং ধৈর্য ধরলে মুনাফা ঘরে আনা সম্ভব বলেও ধারনা ওই বিশ্লেষকদের।  http://pujibazar.com/60628/%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81-%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7